Saturday, April 30, 2016

প্রথম শ্রেণী হতে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্য সকল ছড়া ও কবিতার সংকলন -১

১। হাট্টিমা টিম টিম 

হাট্টিমা টিম টিম 
তারা মাঠে পারে ডিম। 
তাদের খাড়া দুটো শিং 
তারা হাট্টিমা টিম টিম 

২। আয় রে আয় টিয়ে 

আয় রে আয় টিয়ে 
নায়ে ভরা দিয়ে 
না’ নিয়ে গেল বোয়াল মাছে 
তাই না দেখে ভোঁদড় নাচে 
ওরে ভোঁদড় ফিরে চা 
খোকার নাচন দেখে যা। 



৩। আয় আয় চাঁদ মামা 

আয় আয় চাঁদ মামা 
টিপ দিয়ে যা 
চাঁদের কপালে চাঁদ 
টিপ দিয়ে যা। 
ধান ভানলে কুঁড়ো দেব 
মাছ কাটলে মুড়ো দেব 
কাল গাইয়ের দুধ দেব 
দুধ খাবার বাটি দেব 
চাঁদের কপালে চাঁদ 
টিপ দিয়ে যা। 

৪। ছোটন ঘুমায় 
সুফিয়া কামাল 

গোল কোরো না গোল কোরো না 
ছোটন ঘুমায় খাটে । 
এই ঘুমকে কিনতে হল 
নওয়াব বাড়ির হাটে। 
সোনা নয় রুপা নয় 
দিলাম মোতির মালা 
তাই তো ছোটন ঘুমিয়ে আছে 
ঘর করে উজালা। 

৫। ঝুমকো জবা 
ফররুখ আহমদ 

ঝুমকো জবা বনের দুল 
উঠল ফুটে বনের ফুল। 
সবুজ পাতা ঘোমটা খোলে, 
ঝুমকো জবা হাওয়ায় দোলে। 
সেই দুলুনির তালে তালে, 
মন উড়ে যায় ডালে ডালে। 

৬। নোটন নোটন পায়রাগুলি 

নোটন নোটন পায়রাগুলি 
ঝোটন বেঁধেছে, 
ওপারেতে ছেলেমেয়ে 
নাইতে নেমেছে। 
দুই ধারে দুই রুই কাতলা 
ভেসে উঠেছে, 
কে দেখেছে কে দেখেছে 
দাদা দেখেছে। 
দাদার হাতে কলম ছিল 
ছুড়ে মেরেছে, 
উঃ বড্ড লেগেছে। 

৭। কানা বগীর ছা 
খান মুহম্মদ মঈনুদ্দিন 

ঐ দেখা যায় তাল গাছ 
ঐ আমাদের গাঁ, 
ঐ খানেতে বাস করে 
কানা বগীর ছা। 
ও বগী তুই খাস কী? 
পানতা ভাত চাস কি? 
পানতা আমি খাই না 
পুঁঠি মাছ পাই না 
একটা যদি পাই 
অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই। 

৮। হনহন পনপন 
সুকুমার রায় 

চলে হনহন 
ছোটে পনপন 
ঘোরে বনবন 
কাজে ঠনঠন 
বায়ু শনশন 
শীতে কনকন 
কাশি খনখন 
ফোঁড়া টনটন 
মাছি ভনভন 
থালা ঝনঝন। 

৯। প্রভাতী 
কাজী নজরুল ইসলাম 
ভোর হল দোর খোল 
খুকুমণি ওঠ রে, 
ঐ ডাকে জুঁই-শাখে 
ফুল খুকি ছোট রে। 
খুলি হাল তুলি পাল 
ঐ তরী চলল, 
এইবার এইবার 
খুকু চোখ খুলল। 
আলসে নয় সে 
উঠে রোজ সকালে, 
রোজ তাই চাঁদা ভাই 
টিপ দেয় কপালে। 


১০। মামার বাড়ি 
জসীমউদ্‌দীন 

আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা 
ফুল তুলিতে যাই, 
ফুলের মালা গলায় দিয়ে 
মামার বাড়ি যাই। 
ঝড়ের দিনে মামার দেশে 
আম কুড়াতে সুখ, 
পাকা জামের মধুর রসে 
রঙিন করি মুখ। 

১১। সংখ্যার ছড়া 

১ ২ ৩ ৪ 
পাঠ করি বারবার। 
৫ ৬ ৭ ৮ 
ঐ দেখা যায় খেলার মাঠ। 
৯ ১০ ১১ ১২ 
তারাতারি কাজ সারো। 
১৩ ১৪ ১৫ ১৬ 
রাত পোহাল ভোর হল। 
১৭ ১৮ ১৯ ২০ 
রেলগাড়ি হিস্ হিস্। 
২১ ২২ ২৩ ২৪ 
কানাকানি ফিসফিস। 
২৫ ২৬ ২৭ ২৮ 
হেঁটে চলে কুমড়োপটাশ। 
২৯ ৩০ ৩১ ৩২ 
মাঠে চরে গরু মহিষ। 
৩৩ ৩৪ ৩৫ ৩৬ 
ঘোড়াশালে ঘোড়ার সহিস। 
৩৭ ৩৮ ৩৯ ৪০ 
তহল দিচ্ছে নগর পুলিশ। 
৪১ ৪২ ৪৩ ৪৪ 
খেতে মজা পদ্মার ইলিশ। 
৪৫ ৪৬ ৪৭ ৪৮ 
শিমুল তুলার কোমল বালিশ। 
৪৯ ৫০ 
মাঠে মাঠে ধানের ছাস। 

১২। ছুটি 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

মেঘের কোলে রোদ হেসেছে 
বাদল গেছে টুটি, 
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, 
আজ আমাদের ছুটি। 
কী করি আজ ভেবে না পাই 
পথ হারিয়ে কন বনে যাই, 
কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই 
সকল ছেলে জুটি, 
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, 
আজ আমাদের ছুটি। 

দ্বিতীয় শ্রেনিঃ 

১। ছড়া 
আহসান হাবীব 

ঝাঊয়ের শাখায় শন শন শন 
মাটিতে লাটিম বন বন বন 
বাদলার নদী থৈ থৈ থৈ 
মাছের বাজার হৈ হৈ হৈ। 

ঢাকিদের ঢাক ডুমডুমাডুম 
মেঘে আর মেঘে গুড়ুমগুড়ুম 
দুধ কলা ভাত সড়াত সড়াত 
আকাশের বাজ চড়াৎ চড়াৎ। 

ঘাস বনে সাপ হিস হিস হিস 
কানে কানে কথা ফিস ফিস ফিস 
কড়কড়ে চটি চটাস চটাস 
রেগেমেগে চড় ঠাস ঠাস ঠাস। 

খোপের পায়রা বকম বকম 
বিয়েমজলিশ গম গম গম 
ঘাটের কলসি বুট বুট বুট 
আঁধারে ইঁদুর কুট কুট কুট 

বেড়ালের ছানা ম্যাও ম্যাও ম্যাও 
দু দিনের খুকু ওঁয়াও ওঁয়াও। 

২। আমি হব 
কাজী নজরুল ইসলাম 

আমি হব সকাল বেলার পাখি 
সবার আগে কুসুম বাগে 
উঠব আমি ডাকি! 
সুয্যি মামা জাগার আগে 
উঠব আমি জেগে, 
হয়নি সকাল, ঘুমো এখন, 
মা বলবেন রেগে। 
বলব আমি- আলসে মেয়ে 
ঘুমিয়ে তুমি থাক, 
হয়নি সকাল তাই বলে কি 
সকাল হবে না ক? 
আমরা যদি না জাগি মা 
কেমনে সকাল হবে? 
তোমার ছেলে উঠলে গো মা 
রাত পোহাবে তবে। 

৩। কোন দেশে 
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত 

কোন দেশেতে তরুলতা 
সকল দেশের চাইতে শ্যামল? 
কোন দেশেতে চলতে গেলেই 
দলতে হয় রে দূর্বা কোমল? 
কোথায় ফলে সোনার ফসল, 
সোনার কমল ফোটে রে! 
সে আমার বাংলাদেশ, 
আমাদেরই বাংলা রে! 

কোথায় ডাকে দোয়েল-শ্যামা 
ফিঙে নাচে গাছে গাছে? 
কোথায় জলে মরাল চলে, 
মরালী তার পাছে পাছে; 
বাবুই কোথা বাসা বোনে, 
চাতক বারি যাচে রে? 
সে আমার বাংলাদেশ, 
আমাদেরই বাংলা রে! 


৪। সবার সুখে 
জসীমউদ্‌দীন 
সবার সুখে হাসব আমি 
কাঁদব সবার দুখে, 
নিজের খাবার বিলিয়ে দেব 
অনাহারীর মুখে। 
আমার বাড়ির ফুল-বাগিচা, 
ফুল সকলের হবে, 
আমার ঘরে মাটির প্রদিপ 
আলোক দিবে সবে। 
আমার বাড়ি বাজবে বাঁশি, 
সবার বাড়ির সুর, 
আমার বাড়ি সবার বাড়ি 
রইবে না ক দূর। 

৫। কাজের লোক 
নবকৄষ্ণ ভট্টাচার্য 

মৌমাছি, মৌমাছি 
কোথা যাও নাচি নাচি 
দাঁড়াও না একবার ভাই। 
ঐ ফুল ফোটে বনে 
যাই মধু আহরণে 
দাঁড়াবার সময় তো নাই। 

ছোট পাখ, ছোট পাখি 
কিচিমিচি ডাকি ডাকি 
কোথা যাও বলে যাও শুনি। 
এখন না কব কোথা 
আনিয়াছি তৃণলতা 
আপনার বাসা আগে বুনি। 

পিপীলিকা, পিপীলিকা 
দলবল ছাড়ি একা 
কোথা যাও, যাও ভাই বলি। 
শীতের সঞ্চয় চাই 
খাদ্য খুঁজিতেছি তাই 
ছয় পায়ে পিল পিল চলি। 

৬। আমার পণ 
মদনমোহন তর্কালঙ্কার 

সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, 
সারা দিন যেন আমি ভালো হয়ে চলি। 
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, 
আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে। 
ভাইবোন সকলেরে যেন ভালোবাসি, 
এক সাথে থাকি যেন সবে মিলিমিশি। 
ভালো ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা, 
পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা। 
সুখি যেন নাহি হই আর কারো দুখে, 
মিছে কোথা কভু যেন নাহি আসে মুখে। 
সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে থাকি, 
কিছুতে কাহারে যেন নাহি দেই ফাঁকি। 
ঝগড়া না করি যেন কভু কারো সনে, 
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে। 

৭। ট্রেন 
শামসুর রাহমান 

ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে 
রাত দুপুরে অই। 
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে 
ট্রেনের বাড়ি কই? 

একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায় 
মাঠ পেরুলেই বন। 
পুলের উপর বাজনা বাজে 
ঝন ঝনাঝন ঝন। 

দেশ বিদেশ বেড়ায় ঘুরে 
নেইকো ঘোরার সেশ। 
ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি, 
দিন কেটে যায় বেশ। 

থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি 
একটু কেশে খক। 
আমায় নিয়ে ছুটবে আবার 
ঝক ঝকাঝক ঝক। 

৮। আমাদের ছোট নদী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, 
বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে। 
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি, 
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। 

চিকচিক করে বালি, কোথা নাই কাদা, 
এক ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। 
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক, 
রাতে উঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক। 

তীরে তীরে ছেলেমেয়ে নাহিবার কালে 
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে। 
সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে 
আঁচলে ছাঁকিয়া তারা ছোট মাছ ধরে। 

আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভরো ভরো, 
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর। 
দুই কুলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া, 
বরষার উৎসবে জেগে উঠে পাড়া। 

No comments:

Post a Comment