Tuesday, May 10, 2016

রবীন্দ্র সঙ্গীত

পথ চেয়ে যে কেটে গেল
কত দিনে রাতে।
আজ ধুলার আসন ধন্য করে
বসবে কি মোর সাথে।
রচবে তোমার মুখের ছায়া
চোখের জলে মধুর মায়া,
নীরব হয়ে তোমার পানে
চাইব গো জোড় হাতে।
এরা সবাই কী বলে যে
লাগে না মন আর,


আমার হৃদয় ভেঙে দিল
কী মাধুরীর ভার।
বাহুর ঘেরে তুমি মোরে
রাখবে না কি আড়াল করে,
তোমার আঁখি চাইবে না কি
আমার বেদনাতে।

কেন নয়ন আপনি ভেসে যায় জলে ।
কেন মন কেন এমন করে ।।
যেন সহসা কি কথা মনে পড়ে--
মনে পড়ে না গো তবু মনে পড়ে ।।
চারি দিকে সব মধুর নীরব,
কেন আমারি পরান কেঁদে মরে ।
কেন মন কেন এমন কেন রে ।।
যেন কাহার বচন দিয়েছে বেদন,
যেন কে ফিরে গিয়েছে অনাদরে--
বাজে তারি অযতন প্রাণের ‘পরে ।
যেন সহসা কী কথা মনে পড়ে--
মনে পড়ে না গো তবু মনে পড়ে ।।

আর নাই রে বেলা, নামল ছায়া
ধরণীতে,
এখন চল্‌ রে ঘাটে কলসখানি
ভরে নিতে।
জলধারার কলস্বরে
সন্ধ্যাগগন আকুল করে,
ওরে ডাকে আমায় পথের 'পরে
সেই ধ্বনিতে।
চল্‌ রে ঘাটে কলসখানি
ভরে নিতে।
এখন বিজন পথে করে না কেউ
আসা-যাওয়া,
ওরে প্রেম-নদীতে উঠেছে ঢেউ,
উতল হাওয়া।
জানি নে আর ফিরব কিনা,
কার সাথে আজ হবে চিনা,
ঘাটে সেই অজানা বাজায় বীণা
তরণীতে।
চল্‌ রে ঘাটে কলসখানি
ভরে নিতে।

আনন্দধারা বহিছে ভুবনে,
দিনরজনী কত অমৃতরস উথলি যায় অনন্ত গগনে ॥
পান করি রবে শশী অঞ্জলি ভরিয়া--
সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতি--
নিত্য পূর্ণ ধরা জীবনে কিরণে ॥
বসিয়া আছ কেন আপন-মনে,
স্বার্থনিমগন কী কারণে?
চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি,
ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি
প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে ॥
রাগ: মিশ্র মালকোষ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1300
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1894
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে--
নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর করো হে ॥
জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে।
মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে ॥
যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ।
সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ।
চরণপদ্মে মম চিত নিষ্পন্দিত করো হে।
নন্দিত করো, নন্দিত করো, নন্দিত করো হে ॥
রাগ: ভৈরবী
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৩১৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1907
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন


এবার উজাড় করে লও হে আমার
যা-কিছু সম্বল ।
ফিরে চাও, ফিরে চাও,
ফিরে চাও ওগো চঞ্চল ॥
চৈত্ররাতের বেলায় নাহয়
এক প্রহরের খেলায়
আমার স্বপনস্বরূপিণী
প্রাণে দাও পেতে অঞ্চল ॥
যদি এই ছিল গো মনে,
যদি পরম দিনের স্মরণ ঘুচাও
চরম অযতনে,
তবে ভাঙা খেলার ঘরে
নাহয় দাঁড়াও ক্ষণেক-তরে–
সেথা ধুলায় ধুলায় ছড়াও
হেলায় ছিন্ন ফুলের দল ॥


কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে! 
মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে। 
তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপ-কথার,
পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপ্-কথার–
পারুলবনের চম্পারে মোর হয় জানা মনে মনে।। 
সূর্য যখন অস্তে পড়ে ঢুলি মেঘে মেঘে আকাশ-কুসুম তুলি।
সাত সাগরের ফেনায় ফেনায় মিশে
আমি যাই ভেসে দূর দিশে–
পরীর দেশের বন্ধ দুয়ার দিই হানা মনে মনে।।

জগতে আনন্দযঞ্জে আমার নিমন্ত্রণ ।
ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন ।।
নয়ন আমার রূপের পুরে সাধ মিটায়ে বেড়ায় ঘুরে,
শ্রবণ আমার গভীর সুরে হয়েছে মগন ।।
তোমার যঞ্জে দিয়েছ ভার বাজাই আমি বাঁশি-
গানে গানে গেঁথে বেড়াই প্রাণের কান্না হাসি ।
এখন সময় হয়েছে কি ? সভায় গিয়ে তোমায় দেখি'
জয়ধ্বনি শুনিয়ে যাব এ মোর নিবেদন ।।

No comments:

Post a Comment